গাজীপুরের শ্রীপুরে সড়কগুলোতে দিন দিন বেড়ে চলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা। তিন চাকার এসব যানবাহনের কারণে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের ১৩ কিলোমিটার এলাকা। দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে পথচারীদের। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কে অটোরিকশার দাপট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে না কোনও পদক্ষেপ। মানুষের এই ভোগান্তি, দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এবং সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী। একাধিক আটোচালক বলেন, আমরা মাসোহারা দেই। মাসিক ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয় অটোচালকদের। মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটারের ওই অংশে ফুটপাতে ভ্যান গাড়ির ওপর দোকান বসিয়ে মহাসড়ক দখল করে রাখা হয়। ওইসব ভাসমান ভ্যানগাড়ি থেকেও দৈনিক চাঁদা ওঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
মহাসড়কে তিন চাকার (থ্রি-হুইলার) যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরে প্রতিনিয়ত এসব গাড়ির দেখা মিলছে। তিন চাকার যানবাহনের পাশাপাশি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং অদক্ষ চালকের কারণেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, মহাসড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সম্প্রতি শ্রীপুরের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে বেড়েছে অটোরিকশা। শ্রীপুরের একাধিক ওয়ার্কশপে তৈরি হচ্ছে এসব অটোরিকশা। এগুলো তৈরি করতে লাগে না কোনও বৈধতা।
মহাসড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বড় গাড়ি। হাইওয়ে পুলিশ অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও তিন চাকার যানবাহনগুলো তাদের সামনে দিয়েই চলাচল করছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার ব্যস্ততম গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার, নয়নপুর, জৈনাবাজারে চলাচল করে তিন চাকার গাড়িগুলো। অপরদিকে, তাকওয়া, চ্যাম্পিয়ন এবং হাইওয়ে মিনিবাসগুলো মহাসড়কের যেখানে -সেখানে যাত্রী ওঠানামা করছে। চার চাকার এসব যানবাহনে চলাচলও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
‘আগের তুলনায় এখন শ্রীপুরের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যাপক অটোরিকশা (থ্রি হুইলার) বাইড়া গেছে, এত বাড়ছে যে কোনও সড়কে গাড়ি চালাইন যায় না। এহন হারাদিন গাড়ি চালাইয়াও এক হাজার টাহা ইনকাম হরতে কষ্ট অইয়া যায়। মাঝে মাঝে দৈনিক ৪০০ টাকা রিকশামালিকের জমার টাহাও উডাইতে পারি না’, ক্ষোভের সঙ্গে এসব কথা বলেছিলেন শ্রীপুরের লোহাগাছ এলাকার অটোরিকশাচালক আব্দুল জব্বার।সপ্তম শ্রেণীর স্কুলশিক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় শরীরের সঙ্গে অটোরিকশা লেগে যায়। একদিন আমার স্কুল ড্রেস ছিঁড়ে গিয়েছিল।’মাওনা চৌরাস্তা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, ‘বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চলাচলের কারণে ভয়ে ভয়ে সড়ক পার হতে হয়। সড়ক পার হওয়ার সময় হাত দিয়ে সংকেত দিলেও অটোরিকশাচালকরা গতিরোধ করে না। এতে প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনাসহ অঙ্গহানিও ঘটছে।’শ্রীপুরের ২নং সিঅ্যান্ডবি এলাকার অটোরিকশাচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছর যাবত শ্রীপুরে অটোরিকশা চালাচ্ছি। হঠাৎ করে যে হারে অটোরিকশা বাড়ছে তা চিন্তার বাইরে। অটোরিকশা বাড়ার কারণে ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লেগে যাচ্ছে আধা ঘণ্টা। এতে যাত্রী নিয়ে সঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি না, আয়ও কমে গেছে অনেক।’
শ্রীপুরের সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব যানবাহন ও চালকদের নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণ নেই। তারা যখন-তখন মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ে নেমে পড়ছে। এসব অটোরিকশা রাস্তায় যত্রতত্র রাখার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। মাওনা চৌরাস্তায় কথা হয় চকপাড়া এলাকার অটোরিকশারচালক জসীম উদ্দিনের (২২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ দিন আগে অটোরিকশা চালানো শিখেছি। প্রথম দিকে সমস্যা হলেও এখন ভালোভাবে চালাতে পারি।’
স্কুলশিক্ষক শাহজাহান বলেন, ‘অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে উপজেলা সদরের ব্যস্ততম সড়কে চলাচল করছে। প্রশাসনের উচিত এগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন উপজেলাবাসীর গলার কাঁটা। শ্রীপুর এবং মাওনা চৌরাস্তায় অটোরিকশার রাজত্ব। সড়ক-মহাসড়ক সবখানেই তাদের দাপট। এসব যানের বৈধ কোনও কাগজপত্র না থাকায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ওয়ার্কশপ মালিক বলেন, ‘অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করুক, তাহলে আর এগুলো তৈরি হবে না। সরকার যদি ওয়ার্কশপে অটোরিকশা তৈরি বন্ধ করতে বলে তাহলে আমরা বন্ধ করে দেবো।’ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রঙ্গীলা বাজার এলাকার এক ওয়ার্কশপ মালিক বলেন, ‘আমরা শুধু কাস্টমারদের কাছ থেকে অটোরিকশা তৈরির অর্ডার নিই। তাদের পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করে দিই। তারা যদি অনুমতি না নিয়ে রাস্তায় চালায় আমাদের কী করার আছে।’
হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. আ ক ম আখতারুজাজামান বসুনিয়া বলেন, ‘টাকা (মাসোহারা) দিয়ে মহাসড়কে অটো চলে, এটা আমার জানা নেই। মহাসড়কে অটো-সিএনজি চলতেছে এটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। এটা জাতীয় ইস্যু। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করতেছে। আইনের প্রয়োাগটা আস্তে আস্তে করার চেষ্টা চলছে। এটা বড় ধরনের একটি সোসাইটি। যখন তারা মহাসড়কে উঠতেছে তখন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এটা চলাচলের জন্য যদি কেউ সিন্ডিকেট করে থাকে, সেটা স্থানীয়ভাবে করছে, আমাদের কাছে তথ্য আছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন